ে বৃষ্টি ,বাবুই পাখির বাসার বল নিয়ে নেমে গেলাম মাঠে, পড়নে কিছুই নেই। গায়ে ও নেই কিছু, শুধু আতঙ্ক কখন জানি বৃষ্টি থেমে যায়। বৃষ্টি থেমে গেলেই আনন্দ শেষ। ছাগল গুলো ভ্যাঁ ভ্যাঁ করছে, কেন করবেনা, তাদের পেটে তো কিছু নেই। আমরা তো কত কিছু খেলাম, গম ভাজা, চাল ভাজা, খিচুড়ি আরো কত কি। আর ওদের ভাগ্য জুটে তোষা পাটের পাতা, কাঁঠাল পাতা, এ ছাড়া আর কিছুনা। মা, বাবা বকতেছে, তারাতারি বাড়ী আয় জ্বর হবে, সে দিকে কোন খেয়াল নিয়েই। বৃষ্টি থেমে গেলো, কাপড় পড়লাম , কিন্তু মার বেল খেলার পাঠিরা উঁকি ঝুকি মারতেছে, তাদের সাথে ইশারায় কথা বলতেছি, মা, বাবার দিকে খেয়াল রাখতেছি, কখন ঘর হতে বের হয়ে যাবে? একটু সুযোগ পেলাম৷ মুঠো ভর্তি মার্বেল নিয়ে দিলাম দৌড়, এক দৌড়ে রইছ হাজীর উঠানে। ঐ সময় এক পয়সা দিয়েও মার্বেল কিনে নেওয়া যেত। হাতে যদি পাঁচ পয়সা থাকতো, তাহলে সারারাত ঘুম হতনা, কখন সকাল হবে। সকাল বেলা মামার বাড়ি যেতাম, অনেক জলপাইয়ের দানা পেতাম, সেগুলো দিয়ে খেলতাম। আমি সর্ব প্রথমে যেদিন পড়তে গেলাম, সেই দিনটির কথা আমার মনে আছে, আমি মাদ্রাসায় ভর্তি হলাম, তখন ভর্তি হওয়া লাগতোনা, যাওয়া আসা করলেই মাষ্টারেরা নাম খাতায় উঠাইতো। আমি বাড়িতে পড়া লেখা শিখে ফেলে ছিলাম, ক্লাশে পড়া দিতেই মাষ্টার আমাকে বললেন,, তোমার ছোট ওয়ানে পড়া লাগবেনা, তুমি বড় ওয়ানে যাও। এই বলে আমাকে অন্য রুমে নিয়ে গেলেন। ঐ স্যারটির নাম ছিলো দেলোয়ার হোসেন। বগুড়া জেলার ধনুট থানার, চাপড়া গ্রামে। জীবনের প্রথম দিনেই এক ক্লাশ উপরে উঠে গেলাম। চলতে থাকলো লেখা পড়া, দ্বিতীয় শ্রণীতে উঠলাম। ক্লাশ চলতেছে। তখন ১৪/১৫টা করে ছাগল চোড়াই। আমার সহ পাঠি ছিলেন আমার জ্যাঠাতো ভাই নাছির। তার ছাগল আমার চাইতে আরো বেশি।
এক দিন মাদ্রাসা গেলাম, তখন প্রাইমারি স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতি যোগিতার মহরা চলছে, সকাল বেলা ঢোল ঢাক নিয়ে কুচ কাওয়াচ চলছে, ওগুলো দেখে আমার মন আর মানেনা। আমাদের মাদ্রাসাতে কিছুই হয়না, স্কুলে কত কি হয়, আমি আর মাদ্রাসাতে পড়বোনা, কিন্তু ছোট বেলায় আমার বড় একটা অসুখ হওয়ার কারনে মা, বাবা মাদ্রাসাতে পড়ানোর মানত করেছিলেন, এটা একটা বাঁধা হয়ে দাড়ালো, মনে মনে বাবাকে একটা বুদ্ধি আঁটলাম, বাবাকে বুঝিয়ে স্কুলে ভর্তি হবো, পড়ের দিন বাবা স্কুলে যাবেন খেতে বসেছেন, বাবা প্রাইমারির প্রধান শিক্ষক ছিলেন। গাবতলী থানার, তল্লাতল্লা গ্রামে। আমি বাবাকে বললাম, বা,জান!! আমি স্কুলে পড়বো, কেন? মাদ্রাসাতে খেলা হয়না, কোন আনন্দ নেই, অনেক কিছু, ছোট বেলা হতেই বুদ্ধির পন্ডিত ছিলাম বাবাকে বললাম,আমি প্রাইমারি শেষ করে আবার মাদ্রাসাতে ভর্তি হবো, প্রাইমারিতে টুতে ভর্তি হলাম। শুরু হলো জীবনের আর এক নতুন অধ্যায়। টুতেই প্রেম শুরু হয়ে গেলো, যদিও কথাটি হাস্য কর, তবুও এটাই সত্য, প্রেম কি জিনিস বুঝিনা, শুধু এই টুকুই বুঝি না,দেখা হলে খারাপ লাগে এই টুকুই। আঃ রশীদ মাষ্টারের গাছের পাকা তেঁতুলের নাড়ু বানিয়ে লবন সরিষার তৈল মেখে কাগজে মুড়িয়ে নিয়ে যেতাম স্কুলে। ছেলে মেয়ে সারাক্ষন একই স্থানে থাকা, কমন রুম তো ছিলনা, মনে মনে সুযোগ খুজতাম কখন দিবো হাতে, সুযোগ পেলে দিতাম। এটাই ছিলো প্রেম এর বাহিরে বুঝতামনা। তবে স্কুল বন্ধ থাকলে তার বাড়ির আশে পাশে ঘুরতাম, কিন্তু কেন ঘুরতাম? তা, জানিনা, না দেখলে খারাপ লাগতো তাই। নাম ছিলো নাসিমা, বাকি পরিচয়টা না, হয় না,ই দিলাম। টু হতে শুরু করে ফাইভ পাশ করলাম, বাবাকে দেয়া কথাটা আরো সময় নিলাম। হাইস্কুলে ভর্তি হলাম। ষষ্ট শ্রণী পাশ করলাম, বাবা তখন বললেন,, তোমাকে মাদ্রাসাতে ভর্তি হতে হবে। বাবার কথায় আবার মাদ্রাসাতে ফাইভে ভর্তি হলাম। এখানেও দুই বছর পড়া লেখা করলাম। কিন্তু আরবিটা আমার মাথার উপরে পাহাড় হয়ে দাঁড়ালো, কিছুতেই আমি আরবি বিষয়টা বুঝতে পারতেছিনা, আর বি পড়ার চেয়ে লেখাটাই কঠিন হয়ে গেলো, প্রশ্নের উত্তর আরবিতে লিখতে হবে। বার্ষিক পরীক্ষায় দ্বিতীয় হলাম, আরবি সাবজেক্টে বাংলায় উত্তর লিখেছি। আসতে আসতে আমার পড়া কঠিন হতে লাগলো, তার ভিতরে নতুন মৌমাছিরা পিছনে ভিন ভিন করতে লাগলো, জানিনা কেন আমাকে তারা এত পছন্দ করতো? আমি নিজেও জানতামনা। তৃতীয় বারের মত আবার হাইস্কুলে সপ্তমে ভর্তি হলাম। বারে বারে শিক্ষার গতি পরিবর্তন ঘটেছে, ইহাতে আমি কাউকে দোষারুপ করিনা। সমাজের বিভিন্ন অংগ সংগঠনের সাথে মিশে গেলাম। তবে খারাপ কোন কর্ম কান্ডের সাথে কখনো জড়িয়ে পড়িনি। বাবার ইচ্ছা ছিলো আমি সাহিত্যিক ও সাংবাদিক হই, অনেক ছোট কাল হতেই লিখতাম। এবং আমার কথা ও মেধা দেখে বাবা ঐ সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলেন। কিন্তু আমি আমার বাবার স্বপ্ন পুরণ করতে পারিনি। তাই সাহিত্যকে আমি অনেক গুরুত্ব করি। আমি আমার লেখার ভিতরে বাবাকে খুজে পাই। ছাত্র কাল হতেই গার্মেন্টস এ চাকুরি করেছি, নিজের সংসারটা চালাই বাবার আদর্শ্য অনুযায়ি, আমি শিক্ষিত হতে পারিনি, তাই আমার জীবনের শেষ রক্তের বিনিময় হলেও আমার সন্তানদেরকে শিক্ষিত করবো, এটাই মহান আল্লাহর নিকট কামনা, আমার মনটা মায়া মমতা দ্বারা আল্লাহ তৈরী করেছে বিধায় আনন্দ উল্লাশ কপালে জুটেনি, তাই আমি এই বয়সে কিছু লিখে আপনাদের মাঝে বেঁচে থাকতে চাই। আমার শিক্ষা জীবনের ব্যর্থতার জন্য আমি কষ্ট পাইনা, কষ্ট পাই আমার সন্তান যেন আমার মতো না হয়, তাই আপনাদের নিকট আমি আমার সন্তানের জন্য দোয়া চাই সে যেন, তার ভবির্ষত জীবনটা ভালো ভাবে গড়ে তুলতে পারে। সে এখন গাজীপুর ভাওয়াল কলেজের প্রথম বর্ষের ( বি,এ,অনার্স ইংরেজী) ছাত্র। সে যেন তার বাবার মনের আশাটা পূর্ণ করতে পারে এবং সমাজে এক জন আদর্শ্য মানুষ হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে পারে। প্রিয় পাঠকঃ এতক্ষন যারা আমার জীবনের গল্পটি পড়লেন তাদেরকে জানাই আন্তরিক মোবারক বাদ ও শুভেচ্ছা। লিখাটি কেমন লাগলো জানাবেন। বিঃ দ্রঃ শিক্ষার আরো চার বছরের সময়টা লিখিনি। মেট্টিক পরীক্ষা পর্যন্ত গিয়েছি।
0 Comments