Ticker

6/recent/ticker-posts

ফিরে তাকাই

ফিরে তাকাই
     ------------- কামাল উদ্দিন।
রচনা কালঃ ১০/০৩/২০১৯ইং।

বগুড়া চন্দন বাইশা সড়কের জীবন কাহিনীঃ
তখন আমি অনেক ছোট, তবে বুদ্ধিজ্ঞান মোটা মটি
হয়েছে, বিশেষ করে শরমের মানেটা বুঝি।
তখন বগুড়া ফতেহ আলী ব্রীজের পূর্ব পাশে চ্যালোপাড়ার বুক চিড়ে বয়ে যাওয়া চন্দন বাইশা রোডটি পাকা হয়নি। শুধু ইঁট বিছানো,  সেটিও মাঝে মাঝে বড় বড় গর্ত। বাবা একটা জমির কাগজের জন্য
বগুড়াতে যাবে, সাথে আমাকেও নিয়ে যাবে বলে ঠিক
করলেন, আমাকে বগুড়া দেখাবে, আমি তো খুশি।
বাবা আমাকে একটা টম টম গাড়িতে তুলে দিলেন।
গাড়িটি ছিল জোড়গাছা পশ্চিম পাড়ার মরহুমঃ
সোলামান প্রামানিকের। গাড়ির চালক ছিলেন
মরহুমঃ কাশেম বাউরা, জোড়গাছা, পূর্বপাড়া।
গাড়ীর যাত্রী মোট তিন জন। আমি ছোট খোকা
আর দুটি যুবতি মেয়ে। আমাকে পিছনে বসানো হয়েছে,
আমি তাতেই খুশি, কারণ, মেয়েদের মাঝে বসতে
শরম করত, বাবা পায়ে হেঁটেই যাচ্ছেন। একেতো গাড়ীতে কোন দিন উঠিনি, তার পরে ইঁট বিছানা রাস্তা,
তাও আবার মাঝে মাঝে বিশাল গর্ত, গাড়ীর চাকা গর্তে
পড়লে বড় ধরনে ধাক্কা লাগে,গাড়ীর হাতল শক্ত করে
ধরলাম, এভাবে অনেক টুকু পথ আসলাম।
শাম বড়িয়া নামক জায়গায় আসলে বড় একটা গর্তে
গাড়ীর চাকা পড়ে গেল, কিন্তু ঘোড়া তো তা বুঝলনা,
এক টানে চাকা আবার রাস্তায় নিয়ে আসলো, কিন্তু
গাড়ীর ঝাঁকুনিতে আমি আর টিকে থাকে পার লাম না।
ধরাশ করে গাড়ী হতে পড়ে গেলাম। কিন্তু পিছনেই
আরেকটি গাড়ী,সেটিও টম টম গাড়ী।
আমি গাড়ী হতে পড়ে যাওয়ার সময় জ্ঞানটা ভালই
ছিলো, মাঠিতে পড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই হাতে ভর
দিয়ে লাফ দিয়ে রাস্তা পার হলাম।
আমার এই অবস্থা দেখে মেয়ে দুটি তাদের দুই
জনের মাঝে বসালেন।
আমি মনে মনে ভাবলাম, আগে নিলে তো ভালই হত।
যাই হোক বগড়া চেলোপাড়াতে আসলাম।
বাবা অনেক পরে পৌঁছিলেন।
এই ঘটনার অনেক বছর পরে রাস্তা পাকা করার কাজ
শুরু হলো, এক কিলোমিটার করে রাস্তা ক্রমে পাকা
হতে লাগলো, কিন্তু একটি মজার বিষয় হলো রাস্তার মাথা যেখানে সেখানে রাতা রাতি দোকান ও বাজার বসা শুরু হলো। অনেক ধীর গতিতে রাস্তার কাজ
করা হল, এক কিলোমিটার রাস্তা করার পরে মাঝ খানে
রাস্তার কাজ বন্ধঁ থাকলো, প্রায় তিন মাস কাজ করার
পরে আবার বন্ধ হয়ে যায়, এভাবে লাঠি গঞ্জ পর্যন্ত
পাকা হল, তখন লাঠি গঞ্জ শহরের মত হয়ে গেল, আমাদের পূর্ব বগুড়ার লোকদের জন্য লাঠিগঞ্জ হয়ে
গেল বগুড়া শহর। এই ভাবেই রাস্তার কাজ চন্দন বাইশা
অভিমুখি যাত্রা শুরু করল, তবে অনেক ধীর গতিতে
কাজ চলতে লাগলো, কথা একটাই যেখানেই রাস্তার কাজ স্থগিত থাকে সেখানেই গড়ে উঠে বাজার।
এই ভাবে গোলাবাড়ি পর্যন্ত আসার পরে রাস্তার কাজ দীর্ঘ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। তখন আমাদের বগুড়া যাওয়ান জন্য গোলাবাড়ী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে যেতে হত।
বর্ষা কালে নৌকা যোগে ও খোড়া কালে পায়ে হেঁটে।
এ যেন এক রীতি মত জীবন যুদ্ধের মহরা।
গোলাবাড়ী হতে পোড়া দহ আসার পরে সরকার ভুলে
গেল রাস্তা নির্মাণের কথা। আবার অন্ধঁকার ঘুনিয়ে
এলো চন্দন বাইশা রাস্তার জীবনে।
১৯৮৬/৮৭ইং সালে তল্লাতল্লা তৈলের খনির সুবাদে
পোড়া দহ নদীতে টানা ব্রীজ করেন খনি কর্তৃ পক্ষ।
আবার শুরু হয়ে গেল রাস্তা পাকা করনের কাজ।
বগুড়া শহর পূব এলাকার লোকদের নিকট একটু
কাছে আসতে লাগলো। এক টানা কাজ করার পর
রাস্তাটি বালিয়াদীঘিতে এসে আবার বিরতি নিল।
এখানে এক বছর বিরতি নেয়ার পরে পূনরায় কাজ
শুরু তরনী হাট বাজারে এসে দাঁড়িয়ে গেল।
তরণী হাটের পূর্বে অবস্থান রত লোকদের কাছে পাকা
রাস্তাটি জোড় গাছা,বড়িয়া হয়ে কড়ি তোলা পৌঁছিবেনা
কি না এই আশাটি দূর্বল হয়ে গেল। গাড়ির চাকা ঘুরার মত রাস্তাটি সোনা মুয়া নদীর ঘাটে এসে ঘুমিয়ে পড়ে।
এখানে বৎসর দুই অপেক্ষা করলো।
এদিকে ১৯৯৭/৯৮ইং সালে সারা বাংলাদেশের প্রতিটা
ইউনিয়নে দুই কিঃ মিঃ রাস্তা পাকা হওয়ার বাজেটের
জের ধরে জোড়গাছা গ্রামের ভিতরে বাঙ্গালী নদী হতে
শুরু করে বড়িয়া নদী পর্যন্ত রাস্তা টুকু পাকা হয়।
তখন বগুড়া গামী বাসের যাত্রী ছাউনি জোড়গাছা বাজারে তিন মাথা নামক স্থানে গড়ে উঠে।
এভাবেই বগুড়া চন্দন বাইশা রোডের জীবন মানের
উন্নতি সাধীত হয়।
প্রিয় পাঠকঃ
প্রতিটা গল্প কাহিনী লিখতে গেলে খুঁটি নাটি না লিখলে
গল্পের মূল্যা য়ান করা যায়না। জোড়গাছার পর হতে
চন্দন বাইশা বাজার পর্যন্ত রাস্তাটি যেতে পারেনি,
কারণ, এর আগেই চন্দন বাইশা হারিয়ে গিয়েছে
সর্বগ্রাসী যমুনার অতল গহবরে। চন্দন বাইশা ছিল
পূর্ব বগুড়া রাজধানী। আমরা চন্দন বাইশার পূর্ন আগমনের অপেক্ষায় থাকবো।

Post a Comment

0 Comments