পিঁপড়ার ডিম।
--------_-- কামাল উদ্দিন।
ঘটনা কালঃ ১৯৯০ইং।
রচনাঃ কালঃ ২৮/০২/২০১৯ইং।
পরীক্ষার শেষের দিন। তুমি আগেই ঠিক করে রেখেছিলে পরীক্ষা শেষ হলে তোমার মামার বাড়ী বেড়াতে যাবে। বেড়াতে গিয়ে কি করবে, এটা আগেই
শেষ করে রেখেছিলে।
পরীক্ষা শেষ হলো ২৯ শে জুন ৯০ইং।
যথা রীতি তোমাদের বাসায় গেলাম। এক মাসের জমানো গল্প গুলো যেন শেষ হতেই চায়না। যেখানে
প্রতিদিনেই গল্প হত, সেখানে একমাস গল্প হয়নি,
কত কথাই যেন মনের ঝুঁলিতে জমা পড়েছে।
তুমি অবশ্য পরীক্ষা চলা কালে এক দিন আমার সাথে
দেখা করতে গিয়েছিলে, এটা আমি জান তামনা,
জানবো কি করে? তোমার সাথে তো আমার দেখাই হয়নি, তুমি জানতেনা আমার বাসার ঠিকানা।
তাই অনেক কষ্ট নিয়েই বাড়ি ফিরেছিলে।
কথা গুলো আমি তোমার মায়ের নিকট হতে শুনেছি।
তুমি নফল রোজা রেখেছিলে আমার জন্যে, যাতে আমার পরীক্ষা ভাল হয়। তোমার মা আমাকে অনেক
আদর করত, যত না তোমাকে করতো, আমি ও তোমাকে ভাল বাসতাম, তবে তোমার মাকেই বেশি ভাল বাসতাম। আমরা অনেক ক্ষন গল্প করলাম।
এদিকে রাত্রী অনেক হলো আমাকে বাড়ী ফিরতে হবে।
তোমার মা, বাবা অনেক চতুর লোক ছিলো, তারা
আমাকে উল্টিয়ে পাল্টিয়ে পরীক্ষা করেছে, যেভাবে
কাপড়রে আগুন ধরিয়ে পরীক্ষা করে, কত ভাগ কটন
ও কত ভাগ লাইনন আছে। আমি আত্ব মর্যাদার সাথে
তোমার মা, বাবার আঁড়ি পাতা পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম। তাই আমার প্রতি তাদের বিশ্বাসটা বেড়ে
গিয়েছিল, তেমনি আদর স্নেহটা বেশি করতো।
সব কথার শেষে এই সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হলো আগামী কাল
মামার বাড়ীতে বেড়াতে যাব।
কিন্তু কিভাবে বাড়ী হতে বের হব, এটাও আগের দিন রাতেই ঠিক করা হল। তুমি সকালে স্কুলে যাবে, আমিও
স্কুলের আশে পাশে ঘুরা ঘরি করব, আমি ইশারা দিলে
তুমি ছুটি নিবে। পরের দিনে সে স্কুলে আসলো,তখন মোর্নিং
ক্লাশ চলে, স্কুল ছুটি হবে ১১টায়, তখন সারে নয়টা বাজে, আমি এদিক ওদিক ঘুরা ঘরি করতে লাগলাম,
আর অপেক্ষা করতে ছিলাম ইশারার অপেক্ষায়।
এক সময় ইশারা পর্ব শেষ হলো, যেহেতু আমরা আগের
দিনে রাতে সব কথা বার্তা পাকা করে রেখে ছিলাম,
তাই বেশি দেরি হলনা। আমি পূর্ব দিকে রওনা দিলাম।
গ্রামের সীমানা পারি দিয়ে একটি গাছের নীঁচে অপেক্ষা
করলাম। ইতি মধ্যেই সে তার ভাতিজিকে সাথে নিয়ে
এসে পড়েছে। ভাতিজি তখন অনেক ছোট। বয়স সাত /আট হবে। ভাতিজিকে তার বোনের বাসায় রেখে
আসলো। এবার আমরা দু,জন গল্প করছি আর হেটে
চলেছি, মামার বাড়ি গিয়ে কি করবে, কোথায় ঘুরতে
যাবে, বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করতে করতেই মামার
বাড়ি পেয়ে গেলাম। কিন্তু আমিতো তাদের সাথে পরিচিত নই, শুধু তার কথায় আমার বেপারে জেনেছে।
তার এক মামা আগে তাদের বাড়িতে দেখেছিলো।
আমার বেপারে তারা অনেক কিছুই জানে, কিন্তু এটা
জানেনা আমরা এভাবে তাদের বাড়িতে চলে আসবো।
তখন তার দুই মামা বাড়িতে থাকে, তারা দু,জনেই নবম
শ্রেণীর ছাত্র। তারা আমাদেরকে বসতে দিলেন।
জৈষ্ঠ্য মাস, একে তো গরম, তার ভিতরে পায়ে হেঁটে
প্রায় চার মাইল পথ এসেছি, তাই চেয়ার নিয়ে তাল গাছের তলায় বসতে দিলেন। দক্ষিনের হাওয়া আসছিলো, আর আমরা মনের ভিতরে বিভিন্ন জল্পনা
কল্পনা চলছিলো। মনে কোন ভয় ছিলনা।
এ বেপারে আমি ভয় পাইনা। দুই একটা উকিল ব্যারিস্টারকে ঘোলা পানি খাইয়ে দিয়েছি।
মামা যেহেতু নবম শ্রেণীর ছাত্র, সেহেতু তার যথেষ্ট জ্ঞান
রয়েছে, প্রথমে তার ভাগ্নিকে আলাদা ভাবে তাদের বাড়ীতে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছে, এবার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন""
মামা, আপনী এক জন শিক্ষিত ছেলে,। আপনাকে বুঝানোর ক্ষমতা আমার হয়তো নিয়েই কাজেই
ভাল মন্দের বিচার ভারটা আপনাকেই দিলাম।
আমার আর তার ছবি তোলার কথা ছিলো, এটা এক
মাস আগেই পাকা পুক্ত হয়েছে। আমাকে যখন বললেন, ছবিটা তোলা যাবেনা, তাতে আপনী কি বলেন? আমি বললাম, না এতে আমার কোন সমস্যা
নেই, আপনি মানা করলে ছবি তুলবোনা। এক সময়
মামা আামাদের না জানিয়ে সাইকেল চালিয়ে তার
বোনের বাড়িতে জানতে আসলেন আমরা তাদের বাড়িতে গিয়েছি তার বোন বা দুলা ভাই জানে কি না?
আমরা বাড়ি হতে লুকিয়ে যাইনি, ওর মা, বাবা সবাই
জানে। এখানে এসে মামা ভাল ফল করতে পারেনি
উল্টা তাকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে যাতে তাদের হবু
জামাইকে কিছু না বলা হয়।
মামা মুখটা বাঁকা করে ফিরে এসে পুনরায় আমাকে
বললেন, ছবিটা না তুললে চলেনা?
আমি তখন বললাম, ঠিক আছে ছবি উঠাবনা।
এটা আমার মনের কথা ছিলনা,ছিলো বাহিরের কথা।
বড় মামীটা একটু চাতুরী ছিলো, সে তার দেবরকে ধমক দিল, তাদের মা বাবা সবাই যেহেতু জানে,,৷ তাহলে এতে তুমি বাঁধা দাও কেন?
মামা তখন নীরব হয়ে গেলো। আমরা দুপুরের খাবার।খেলাম, একটু বিশ্রাম নিলাম, এর পরে ষ্টুডিও এর দিকে
রওনা দিলাম। ষ্টুডিও চন্দন বাইশা বাজারে। তার মামার বাড়ি হতে আরও দুই মাইল দুরের পথ। অবশেষে আমরা ষ্টডিতে পৌছিলাম। ষ্টুডিওটির নাম ছিল জোঁনাকি ষ্টডিও, চন্দন বাইশা বাজারের ভিতরে
সুনাম ধন্য একটি ষ্টুডিও, আমাদের বেপারটা ষ্টুডিও
ফটোগ্রফার ধরতে পেরেছিলো, তাই বেশ যত্ন সহকারে
ছবিটা তুলেছিলো, কিন্তু ছবিটা পেতে অনেক কষ্ট হয়েছিলো, প্রথমে ডেলিভারির সময় নিয়েছিল পনের
দিন, এর পরে ও ছবি দিতে পারেনি, পরে আরও
সাত দিন সময় নিয়েছিলো, কারণ, তখন তারা রঙ্গিন
ছবি গুলো বগুড়া হতে ধোলাই করত, এতে করে
অনেক দিন সময় নিতে হয়েছিলো।
মামার বাসায় ফিরে এলাম সন্ধাঁর আগেই। তাকে তার
মামার বাড়িতে রেখে আসতে চাইলে কিছুতেই রাজি
হচ্ছিলনা, অবশেষে আবার তাকে বাড়ি আনতে হল।
সোঁনাপুর গ্রামের মাঝে এসে আর হাঁটতে পাচ্ছিলনা।
বার বার বলতেছিল, আর হাঁটতে পারবনা, এই বলে
মাটিতে বসে পড়ল, কি আর করা যাবে, আমাকেও বসতে হল, কিছুক্ষন গল্প করা হল, মানে এখান হতেই
আমরা আলাদা হয়ে যাব, ঠিক সকাল বেলার মত,
অবশেষে তাই করলাম। আমরা আলাদা হলাম, যেন
কেউ কাউকে চিনিনা। আমাদের ভালবাসা ছিল পিঁপড়ার ডিমের মত, আমরা দু,জনার ভালবাসাকে
সব সময় মাথায় নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি,
বিঃ দ্রঃ পাঠকের সারা পেলে গল্পটি আরও সামনে
নিয়ে যাব, এটি একটি লম্বা আলোচনা, কাছেই থাকুন
লাইক দিন, পরের লেখা পেতে অপেক্ষা করুন।
0 Comments