বসত ভীটা
--- কামাল উদ্দিন।
তাং ৩১/৫/২০১৯ইং।
বাবা চেয়ে দেখ, ঐ খানে মোদের ঘর ছিলো সর্বনাশা যমুনা নদী কেড়ে নিয়েছে। গোয়াল ভোরা গরু ছিলো, খোয়াড় ভোরা হাঁস মুরগী ছিলো, পুকুরে মাছ
ছিলো, কবুতর খোপে কবুতর ছিলো।
জানিস বাবা, আমি যখন এ বাড়িতে নতুন বউ হয়ে এসেছিলাম, তখন নদী অনেক দুরে ছিলো, কত মনে মনে ভাবতাম, এক দিন নদী দেখতে যাবো, তোর বাবা
রাজী হতনা, খালি খালি বলতো, এত কাম থুয়া তুমি কেমনে যেতে চাও? কাজের তো শেষ নেই। এভাবে প্রায়
দুই তিন বছর চলে গেলো নদী দেখা হলোনা।
অনেক কষ্ট করে তোর দাদীকে রাজী করালাম।
কিন্তু তোর দাদী বলতো, বউমা দেখো এক দিন এই
নদীই আমাদের দেখতে আসবে, নদীর মতি গতি ভালোনা। এর পর হতেই নদী রাক্ষসের মত আমাদের দিকে ধেয়ে আসতে লাগলো। প্রতি দিন মানুষের ফসলি
জমি নদী গর্ভে বিলীন হতে লাগলো।
দেখতে দেখতে চন্দন বাইশা বাজার গেলো, কর্ণীবাড়ি আটা চর গেলো, কর্ণীবাড়ি গেলো, কর্ণীবাড়ি বিলে আসলো, এভাবে নদী আসতেই লাগলো।
সাত দিন আগে যে ঘরে বৈদ্যতিক আলো জ্বলতো সেখানে সাত দিন পরে পানির উপরে জোৎস্নার আলো
দুলে। যেখানে বড় বড় বট গাছ ছিলো, পুকুর ভোরা
মাছ ছিলো সেখানে এখন পানি ঢেউ খেলে।
যেখানে আমার বাঁশঝাড় ছিলো আজ সেখানে পানি
পাক খাচ্ছে, ঐ যে একটা বাঁশের কঞ্চি দেখতে পাচ্ছিস
ওটা তোর দাদার কবর। নদী যখন আমাদের বাড়ির দিকে আসতে ছিলো তখন তুই দুনিয়াতে আসিস নি,
তুই আমার পেটে, তোকে পেটে নিয়েই তিন বার বাড়ি সরিয়েছি, শেষে বাঁধে সামান্য একটু ঘির দিয়ে রাত্রী
যাপন করেছি, তোর জন্মটা বাঁধেই হয়েছে, এজন্য
তোর নাম রেখেছি বাঁধন। জানিস বাঁধন তুই যেদিন
বড় হবি সে দিন হয়তো আমাদের বসত বাড়িটা আবার
ভেসে উঠবে, ভেসে উঠবেনা তোর দাদা, তোর দাদী,।
সে দিন দেখতে পারবিনা হয়তো আমাকে, বাবাও হয়তো হারিয়ে যাবে, আজকে ভালো করে দেখে নে
তোর বাবার বসত ভীটার শেষ চিহ্নটা, হয়তো এটাও
এক দিন দেখতে পাবিনা।
😥😥😥😥😥😥😥
0 Comments